valobasar golpo মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় 11 – সপ্তপদীর বহ্নিশিখা 2

bangla valobasar golpo choti. অবশেষে সেইদিন আসে। আমার বিবাহ, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের সোমবার। বাড়ি ভর্তি লোকজন, চারদিকে হইহই রইরই ব্যাপার। বিয়ে উপলক্ষে একটা বাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল, বরযাত্রী থাকার জন্য একটা হোটেল ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সকাল থেকে বাড়িতে সানাই বাজতে শুরু করে। সকাল বেলায় আমাকে এক রকম টেনে ঘুম থেকে তুলে দেওয়া হল।

অনেক রাতে ঘুমিয়েছিলাম তাই চোখে তখন ঘুম মাখা ছিল। ছোটমা আর কয়েকজন মিলে দধিমঙ্গল করে আমাকে দই চিড়ে খাইয়ে দিল। বড়রা বলল যে আমাকে সারাদিন কিছু খেতে দেওয়া হবে না। মৈথিলী আমার দিকে চোখ টিপে ইশার করে যে খাওয়ার জন্য কোন চিন্তা নেই, ও ঠিক আমার জন্য খাবার নিয়ে আসবে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে ফেলি।

সকালে গড়িয়ে এলে নিলাদ্রি আমার জন্য গায়ে হলুদের হলুদ নিয়ে আসে। মৈথিলী সবার আগ আমাকে গায়ে হলুদ লাগিয়ে দেয়, আমি স্থানুর মতন দাঁড়িয়ে থাকি। মৈথিলী আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গালে হলুদ লাগিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। তারপরে একে একে বাড়ির এয়োস্ত্রীরা আমাকে হলুদ লাগিয়ে দেয়। ছোটমা আমাকে স্নান সেরে নিতে বলেন। আমি স্নান সেরে বেড়িয়ে একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরি। ছোটমার চোখে জল, কিছু কষ্টে কিছু আনন্দে। আমার হাথে একটা লোহার বালা পড়িয়ে দেন ছোটমা। আমি নিজের ঘরে ঢুকে যাই। তিস্তা দেলিসা বাড়ি পৌঁছে গেছে। আমার বিয়ে উপলক্ষে ওরা বেশ খুশি।

valobasar golpo

আমি একটু পরে বসার ঘরে যাই, বসার ঘরে পা দিতেই আমার পা মেঝেতে আটকে যায়। বসার ঘরের দেয়ালে একটা বিশাল পেন্টিং ঝুলছে, পেন্টিং টা সক্রেটিসের। সেই পেন্টিঙ্গের এক কোনায় সই করা “অভিমন্যু, 1991.” ছোটমা সেই পেন্টিঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে একমনে সেই দিকে তাকিয়ে থাকেন। সবার চোখ আড়াল করে চোখ মুছে নেন ছোটমা। বুঝতে কষ্ট হয়না যে মায়ের মন তাঁর পুত্রের জন্য কেঁদে উঠেছে। আমি চুপচাপ সরে এলাম সেখান থেকে।

ধিরে ধিরে বিকেল গড়িয়ে এল। আমাকে সাজাতে এক মহিলাকে ডাকা হয়েছিল। প্রথমে কপালে চন্দনের ফোঁটা, ভুরুর মাঝে সুন্দর একটা লাল টিপ, কপালে সুন্দর আঁকিবুঁকি। চোখের কোনে কাজল, এঁকে এঁকে রঙ মাখানো হয় আমার মুখে। প্রাণহীনাকে জীবন্ত করে তুলতে সবার যেন এক মরিয়া প্রচেষ্টা। লাল বেনারসি, লাল ব্লাউস আর লাল চেলিতে ঢেকে দেওয়া হয় আমার দেহ। আমি রক্তাত এক নারী, অতি সুন্দর করে সাজান।

মৈথিলী আমার সামনে বসে আমাকে এক এক করে সোনার গয়না পড়িয়ে দিতে শুরু করে। কানে বড় বড় দুটি ঝুমকো। গলায় একটার পর একটা সোনার হার। হাতে সোনার চুরি, চুড়, বালা ইত্যাদি। সারাক্ষণ আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, আমাকে সাজিয়ে তোলে মন ভরে। কারুর মুখে কোন কথা নেই। আমার বুক কেঁপে ওঠে ওর ভেজা চোখের পাতা দেখে, আমি কেঁপে উঠি, মৈথিলী জোর করে চেপে ধরে আমার হাত, শেষ চুড়ি পড়িয়ে দেয় আমার হাতে। valobasar golpo

সাজানোর পরে আমার মুখের দিকে তাকায় মৈথিলী, চোখের পাতা কেঁপে ওঠে ওর। আমার বুক কেঁপে ওঠে, আমার ঠোঁট কেঁপে ওঠে, আমি যেন এবারে ভেঙ্গে পড়বো। আমি ঠোঁট কামড়ে ধরি নিজেকে সামলানোর জন্য। মৈথিলী আমার মাথায় আঁচল টেনে দেয়। আমার গাল ছুঁয়ে সস্নহে আদর করে আর চোখের কোল মছে বারেবারে। এই পৃথিবীতে একমাত্র মৈথিলী জানে আমি কত নিরুপায়, আমার ব্যাথা দেখে মৈথিলী নিজের বুকের ভাষা হারিয়ে ফেলে।

আমি উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে আয়নায় দেখি। আয়নার প্রতিফলন এক নির্জীব প্রাণহীন নারীর, ঠোঁটে মেকি হাসি নিয়ে অতি সুন্দর সেজে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়ির সবাই আমার বিয়ে উপলক্ষে খুশি, একমাত্র আমি যার বিয়ে সে যেন এক নিস্তব্ধ প্রাণহীন মূর্তি।

দরজায় কেউ টোকা দেয়। মৈথিলী দরজা খুলে দেখে যে আমার বড়দা দরজায় দাঁড়িয়ে। সুমন্তদা ঘরে ঢুকে আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখেন। সস্নেহে আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে বলেন, “আমি তোর অভাগা দাদা রে, পরী। তোকে দেওয়ার মতন আমার কাছে কিছু নেই।”

আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলেন, “এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই রে, তাই আমি আমার সম্পত্তি সব বিক্রি করে তোর নামে কিছু টাকা ফিক্সড করে দিয়েছি।”

আমি নিজেকে আর সামলাতে পারিনা। আমি বেদনায় প্রায় আঁতকে উঠি, “না, আমি এটা নিতে পারব না দাদা। তোমার কি হবে, তুমি কোথায় যাবে এর পরে।” valobasar golpo

দাদা আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না, পকেট থেকে একটা ছোটো বাক্স বের করে আমার হাতে দিলেন, আমি খুলে দেখলাম তাঁর মধ্য একটা হীরের আংটি আছে। দাদা আমাকে বললেন, “তোর বউদির সব গয়না আমি বিক্রি করে দিয়ে এই আংটি কিনেছি। তোর বৌদি নেই, এখানে থাকার আর কোন মানে নেই। আমি এবারে হরিদ্বার না হয় হৃষীকেশ চলে যাব।”

আমি বারেবারে মাথা নাড়িয়ে কেঁদে বলি, “তুমি শেষ পর্যন্ত আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? না, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো না। না।”

আমার দু’চোখে অশ্রু বয়নি সেদিন, সেদিন দুচোখ দিয়ে বুকের রক্ত নেমে এসেছিল। মৈথিলী আমার মাথা কোলের মাঝে জড়িয়ে ধরে আমাকে শান্ত করার জন্য, বুক ফেটে চৌচির হয়ে যায় আমার। সেই শেষ বারের মতন আমি সুমন্তদাকে দেখি। ফিরে তাকালেন না দাদা, দরজা দিয়ে বেড়িয়ে চলে গেলেন চোখের জল মুছতে মুছতে।

আমি মৈথিলীকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠি, “আমাকে ছেড়ে যেওনা দাদা, আমি বড় অভাগী।” valobasar golpo

আমার কান্না শুনে অনেকেই আসে ঘরের মধ্যে। মৈথিলী কাউকে ঢুকতে দেয়না। ওর চোখেও সেদিন আষাঢ়ের বারিধারা নেমে আসে। ধরা গলায় আমার চোখের জল মুছিয়ে, আবার সাজিয়ে তুলে বলে, “পরী সময় হয়ে এসেছে।”

দরজার বাইরে থেকে ছোটমা আমাকে ডাক দিলেন, “পরী আর কতক্ষণ, দেরি হয়ে যাবে যে। বরযাত্রী কিছু পরেই চলে আসবে। তাড়াতাড়ি কর।”

মৈথিলী উত্তর দিল, “একটু সময় দাও আমাদের, আমি ওকে নিয়ে আসছি।” আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে আমার চোখের জল মুছিয়ে বলে, “এবারে যেতে হবে, পরী।”

আমি ধিরে ধিরে উঠে দাড়াই, আমার ঘরের চার দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখি। বইয়ের তাক ছুঁয়ে তাকে বিদায় জানাই, আমার বিছানা ছুঁয়ে তাকে বিদায় জানাই। শেষ বারের মতন আমার পড়ার টেবিল ছুঁয়ে তাকে বিদায় জানাই।

ছোটমা কিছু পরে আমার ঘরে ঢুকে আমাকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেন, গালে হাত দিয়ে ধরা গলায় বলেন, “সোনা মা, তোকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে।”

আমি ছোটমায়ের স্নেহের পরশে গলে যাই, গলা জড়িয়ে কেঁদে ফেলি, “মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।” valobasar golpo

আমাকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে বলেন, “সোনা মা, বিয়ের আগুনে তোকে তোর অতীত জ্বালিয়ে দিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করতে হবে।”

আমি মাথা নাড়াই, হ্যাঁ। তিস্তা আর মৈথিলীর সাথে আমি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাই।

বিয়েতে আমার সব বন্ধু বান্ধবীরা এসেছিল। একে একে আত্মীয় সজ্জনেরা এসে আমাকে অভিবাদন জানিয়ে গেল। দেবব্রত আর তিস্তা কে দেখলাম। তিস্তা বিয়ের সময়ে একটা সুন্দর শাড়ি পড়েছিল। ওর সব থেকে ভালো বান্ধবীর বিয়ে, খুব আনন্দিত। আমি ওকে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করি, “কিরে তোদের কি খবর, সব ভালো?”

আমার কথা শুনে দেবব্রতর দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে বলে, “বড় শয়তান ছেলে।”

ওর লাজুক হাসি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। দেবব্রত আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে, পেছনে তিস্তা। আমি ওকে দেখে একটু ঘাবড়ে যাই, কি করতে চলেছে ছেলেটা। দেবব্রত আমার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে কাঁপা গলায় বলে, “মিতা, আমাদের ভুলে যাবে না ত? আমি আমার ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য ফিরে পেয়েছি, আমাদের সব কিছু তোমার দেওয়া।”

তিস্তা কেঁদে ফেলে, “আমি খুব খারাপ মেয়ে ছিলাম। সেদিন গ্লোবে যদি তুমি আমাকে পথ না দেখাতে তাহলে হয়ত আমি বয়ে চলে যেতাম।”

তিস্তা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, “আমাদের ভুলে যেওনা।” valobasar golpo

আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করে বলি, “এই পাগলি মেয়ে, এই রকম করে কেউ কাঁদে নাকি? আমি তোদের কি করে ভুলে যাই বলত? আমি তোদের বিয়েতে নিশ্চয় আসব, কথা দিচ্ছি।”

দেলিসা আর দানিস কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। দানিস আমার কথা শুনে চেঁচিয়ে বলে, “আপা আপা, আমার কথা ভুলে গেলে। আমার বিয়েতে আসবে না?”

আমি দানিসকে কাছে ডেকে বলি, “ওরে ছেলে, আমি তেপান্তরের মাঠে যাচ্ছি নারে, আমি ধানবাদ যাচ্ছি। আমি যেখানেই থাকি না কেন, তোদের বিয়েতে নিশ্চয় আসবো।”

এমন সময় ইন্দ্রানিদি আমার কাছে এসে বলেন, “তুই কোনদিন আমাদের বম্বের বাড়িতে যাস নি। এবারে বর কে নিয়ে একবার যাস।”

আমি উত্তরে মৃদু মাথা নাড়িয়ে বলি, ঠিক আছে নিয়ে যাব। সবার প্রশ্ন, সবার আব্দার, সবার খুশি, আমি চেহারায় এক নকল আনন্দ মাখিয়ে সবার আব্দার রাখি।

নিলাদ্রি এক সময়ে আমার কানে এসে ফিসফিস করে বলে যায়, “বৌদি তোমাকে দারুন দেখতে লাগছে।”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলি।

সেই আনন্দের ক্ষণে আমার চোখ আমার বড়দা সুমন্তদা কে বারেবারে খুঁজে বেড়ায়। মৈথিলী সর্বদা আমাকে আগলে রাখে, আমি ওকে বড়দার কথা জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দেয় যে বড়দার ট্রেন রাতে, তাই বড়দা চলে গেছেন। বড়দা হয়ত বুঝতে পেরেছিল তাঁর ছোটো বোনের মনের কষ্ট, তাই হয়ত আমার চোখের জল আড়াল করে নিজেকে এই বিশাল পৃথিবীর বুকে হারিয়ে দিয়েছেন। valobasar golpo

দীপঙ্কর কে দেখে আমি খুব আনন্দিত হয়ে উঠি, আমার প্রানের বান্ধবী কল্যাণী অচিরে মা হতে চলেছে। আমি দিপঙ্করকে জিজ্ঞেস করি কল্যাণীর কথা। দীপঙ্কর আমাকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে কল্যাণীর সাথে কথা বলতে বলে।

আমি ফোন ধরে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকি, গলার কাছে এক অব্যক্ত ব্যাথা দলা পাকিয়ে ওঠে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “কেমন আছিস তুই?”

কল্যাণী ওপর পাস থেকে ফুঁপিয়ে ওঠে, “আমি তোর সাথে কোনদিন কথা বলব না, তুই ফোন রেখে দে।”

আমি কানের ওপরে চেপে ধরি ফোন, যদি ওর নিস্বাসের আওয়াজ শোনা যায়। আমি চোখের জল মুছে দিপঙ্করের হাতে ফোন ধরিয়ে দেই।

আমি নিরুপায়, সেই সময় কে আমি থামিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হায় এই প্রকৃতির নিয়ম, সময় কারুর জন্য অপেক্ষা করে থাকেনা। রাত বাড়তে শুরু করে, বিয়ের লগ্ন আসন্ন।

ছোটমা আমার কাছে এসে বলেন, “সোনা মা, সময় হয়ে এসেছে।” valobasar golpo

এ যেন বলির জন্য ডাক!

শশাঙ্কদা, সুব্রত, দেবব্রত, দানিস চারজন মিলে আমাকে পিঁড়িতে বসিয়ে বিয়ের মন্ডপের দিকে নিয়ে যায়। বিয়ের মন্ডপে রইরই হইহই শুরু হয়ে যায় কনে দেখে। সবার চেহারায় আনন্দের হাসি, আমি সাজান এক মূর্তির মতন নকল হাসি নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে থাকি।

ওর সামনে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত আমাদের মালা বদল হয়ে গেল। আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। ওর চোখে কেমন একটা হাসি, যেন অবশেষে একটা যুদ্ধ জিতে নিয়েছে। আমি ওর চোখের হাসি দেখে লজ্জা পেয়ে গেলাম, শেষ পর্যন্ত আমার মনে এক লাজুক ভাব ফুটে উঠল সেই নকল খুশির মাঝে।

বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়লাম দুজনে। বাবু আমার কন্যাদান করবেন, হোমের স্থানে বসে আছেন বাবু। সেই সকালে বৃদ্ধির সময়ে বাবুর সাথে দেখা হয়েছিল, সারাদিনে বাবু আমার সামনে আসেন নি। বাবুর মুখ বড় গম্ভির, একটু বেদনা মাখানো।

পিতলের কলসের দুপাশে বসিয়ে দেওয়া হল আমাকে আর হিমাদ্রিকে। হিমাদ্রির হাতে আমার হাত তুলে দেওয়ার সময়ে বাবু চোখের কোল মোছেন। ব্রাহ্মনের মন্ত্র, প্রদীপের উত্তাপ, ধুপকাঠির ধোঁয়া, সব মিলিয়ে এক অধভুত অনুভুতি আমার শরীরে ভর করে। বিয়ের মন্ত্র শুরু হয়। মৈথিলী আমার বেনারসির লাল আঁচল হিমাদ্রির সাদা জোড়ের কোনে বেঁধে দিল। আমার জীবন অবশেষে এক অচেনা অজানা ব্যাক্তির ভাগ্যের সাথে বাঁধা পরে গেল। valobasar golpo

হোমের আগুন জ্বলে ওঠে। সপ্তপদীর ডাক আসে, সেই বহ্নিশিখাকে সাক্ষী করে নিতে হবে জীবনের একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা। এই কি আমি চেয়েছিলাম? আমি চোখ বন্ধ করে নেই কিছুক্ষণের জন্য। চোখ খুলে ছোটমা আর মৈথিলীর দিকে তাকাই। মৈথিলীর চোখে জল, ঠোঁটে হাসি, ছোটমা মৃদু মাথা নাড়িয়ে আমাকে আশীর্বাদ জানায়। এক এক পাঁকে আমি আমার অতীত সেই সপ্তপদির বহ্নিশিখায় পুড়িয়ে ছারখার করে দিলাম। বুক আর জ্বলে ওঠেনি সেই অতীত জ্বালিয়ে দেওয়ার সময়।

সিঁদুর পরানোর সময় এসে গেল। হিমাদ্রি আঙটি সিদুরে ডুবিয়ে আমার সিঁথিতে ছুঁইয়ে দিয়ে পেছন দিকে টেনে দিল। প্রথমে সেই আংটি আমার কপাল ছুঁয়ে যায়, ঠিক যেখানে ওর ঠোঁটের পরশ লেগে। আমি চোখ বন্ধ করে নেই, আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, যে, যেখানে ওর ঠোঁটের পরশ লেগে, সেখান সেদিন অন্য একজন সিঁদুর পড়িয়ে নিজের করে নেবে। বুক একটু কেঁপে উঠেছিল, কিন্তু থামিয়ে দিলাম সেই কম্পন, অনেক আগে চলে এসেছি আমি।

পিছনে ফেরার আর পথ নেই আমার। সিঁদুর পরানো শেষ কিন্তু আমার নাকের ওপরে এক ফোঁটাও সিন্দুর পরে না। সবাই চেঁচিয়ে ওঠে, নাকে যে সিঁদুর পরেনি, সবার একটা অন্ধবিশ্বাস যে কনের নাকের ওপরে সিঁদুর পড়লে সেই বর কোনে কে খুব ভালবাসে। মৈথিলী আলতো করে আমার মাথা সামনের দিকে ঠেলে দেয় কিন্তু তা সত্তেও একফোঁটা সিঁদুর আমার নাকের ওপরে পরে না। আমি ওদের কান্ড দেখে হেসে মনে মনে ফেলি, কিন্তু কেউ তাতে ক্ষান্ত নয়। valobasar golpo

মৈথিলী সবার উদ্দেশ্যে জোর গলায় বলে, “ও একটা গরু নয় যে বারেবারে মাথা নাড়াবে।”

ওখানে দাঁড়ান সবাই ভাবে যে মৈথিলী আমাকে আগলে রাখছে কারন আমি সারা দিনের উপসে আর বিয়ের হট্টগলে হয়ত ক্লান্ত, কিন্তু আমি জানতাম ওর মনের আসল অভিপ্রায়। মৈথিলী প্রানপন চেষ্টা করে যায় আমাকে সব বিপদের থেকে আগলে রাখতে কিন্তু ভবিতব্যের সামনে সবাইকে হার মানতে হয়, অগত্যা মৈথিলী তার সাধের ননদিনিকে বাচাতে সক্ষম হয় না শেষ পর্যন্ত।

আমার চোখের পাতা ভিজে ওঠে, চোখের কোন থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে, সেই অশ্রু তে অনেক কিছু মেশানো ছিল সেদিন। আমার দুঃখ আমার কষ্ট, আমার বেদনা, আমার রাগ, আমার ভালোবাসা, অজানার ডাক, অনন্ত শূন্যতা অনন্ত অন্ধকার। আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, সত্যি কি আমি খুশি? আমি জানিনা। আমি ত ছোটমা আর বাবুর ঋণ শোধ করেছিলাম, নিজের জীবনের দাম দিয়ে। হৃদয়ের এক এক পাঁজর দিয়ে বানানো একটা বাক্সে আমি আমার অতীত, আমার ভালোবাসা, আমার স্বপ্ন তালা বন্ধ করে সেই পাঁজরের বাক্স ছুঁড়ে ফেলে দিলাম অতল সমুদ্রের গহিনে। valobasar golpo

দু’নয়ন ভাবলেশ হীন, ঠোঁটে নকল হাসি টেনে ঝাপসা দৃষ্টি হোমের আগুনে নিবদ্ধ। আমার সামনে সপ্তপদীর লেলিহান শিখায় “পরী” জ্বলছে, “মিতা” আমার পাশ থেকে সরে দাঁড়াল, বিয়ের পিঁড়িতে বসে এক নতুন “শুচি”, শুচিস্মিতা কর্মকার!

গল্পটি কেমন লাগলো ?

ভোট দিতে স্টার এর ওপর ক্লিক করুন!

সার্বিক ফলাফল / 5. মোট ভোটঃ

No votes so far! Be the first to rate this post.

Leave a Comment